ভারতবর্ষের বুকে স্বাধীনতা সংগ্রামী মহিয়সী নারী বেলা বোসের নামে স্থাপিত রেলস্টেশন

0

বিভিন্ন মনীষীদের নামে রেলস্টেশনের নাম হতে আমরা আকছার দেখছি। কেবল রেলস্টেশন কেন বিমানবন্দর, রাস্তা, স্টেডিয়াম সবকিছুই মনীষীদের নামে নামাঙ্কিত করা হয়ে থাকে।

তবে জানেন কি প্রথম কনোও মহিলার নামে রেলস্টেশনের নাম হয়েছিল আমাদের বাংলাতেই। হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বেলানগর।

আর এই স্টেশনের নাম হয়েছিল এক মহীয়সী নারীর নামে। আর এই স্টেশনের নাম হয়েছিল এক মহীয়সী নারীর নামে। যিনি আর কেউ নন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভাইঝি।

এছাড়াও বর্তমান প্রজন্ম আরও একটি পরিচয়ে চিনবেন তাঁকে। বর্তমানে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের মা হলেন বেলা মিত্র।

দেশের অগ্নিযুগের সেই স্বাধীনতা সংগ্রামী আজ আমাদের স্মৃতির অতলে চলে গিয়েছেন। “2441139, বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে ?”

না, অঞ্জন দত্তের গানের সেই বেলা বোসের কথা বলছি না৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সেজদা সুরেশচন্দ্র বসুর ছোট মেয়ের নাম বেলা বস।

1941 সালে গৃহবন্দি নেতাজির মহানিষ্ক্রমণে বিশেষ ভূমিকা পালন করা ইলা বসুর ছোট বোন ছিলেন বেলা। কোদালিয়ায় পূর্বপূরুষের ভিটেতেই তাঁর জন্ম।

মহান ব্যক্তিদের নাম নিয়ে রেলস্টেশন হওয়ার ঘটনা এর আগেও দেখা গেছে। ধরে নেওয়া যাক বিধান নগর অথবা নন্দকুমার অথবা কৃষ্ণনগর।

তবে এই রেল স্টেশন গুলির মধ্যে একটি বিশেষ মিল আছে, যেখানে দেখা যায় মহীয়সী ব্যক্তিত্বরা প্রত্যেকেই হলেন পুরুষ।

তবে বেলানগর স্টেশনটির নামকরণ হয়েছিল বেলা বোস মিত্রের নামে। তার গায়ে বইছে বিপ্লবীর রক্ত। তিনি হলেন নেতাজির সেজদা সুরেশ চন্দ্র বসুর কনিষ্ঠ কন্যা।

১৯২০ সালে কোদালিয়ার গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। তারপর ১৯৪০ সালে রামগড়ে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস অধিবেশন পরিত্যাগ করে নেতাজি যে আপোষ বিরোধী আন্দোলনের,

ডাক দিয়েছিলেন সেখানে নারী বাহিনীর প্রধান ছিলেন বেলা বোস। পরবর্তীকালে আজাদ হিন্দ ফৌজ এর গুপ্তচর বিভাগের প্রধান হরিদাস মিত্রের তার সাথে বিয়ে হয় বেলা বোসের।

নেতাজি পূর্ব এশিয়া থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজ এর যে সমস্ত দলগুলিকে প্রেরণ করতেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং নিরাপদে অবতরণ করানোর দায়িত্ব ছিল এই বেলার ওপরে।

স্বাধীনতার হরিদাস মিত্র কংগ্রেসে যোগ দেন এবং ভোটে জিতে বিধানসভার উপাধ্যক্ষ হন৷ তবে তাঁর স্ত্রী বেলা রাজনীতির আঙিনায় পা রাখেননি৷

তার বদলে ঝাঁসি রানি নামে একটি দল গঠন করে সমাজসেবা চালিয়ে যেতে থাকেন৷ অক্লান্ত পরিশ্রমে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর পুনর্বাসনে,

কাজ করে গিয়েছেন বেলা বসু৷ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই কাজ করার জন্য বালি-ডানকুনি লাইনের অভয়নগরে তিনি ক্যাম্প তৈরি করে সেখানেই থাকতেন।

নিরলস পরিশ্রমে ক্রমে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে৷ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি৷ ১৯৫২ সালের জুলাই মাসে তাঁর জীবনাবসান হয়!

প্রচারের আড়ালে থেকে জনগণের স্বার্থে কাজ করে গিয়েছেন বেলা বসু৷ তাঁর অবদান অনেকেই মনে রাখেননি৷ যোগ্য জায়গা পাননি ইতিহাসের পাতায়৷

তবে দেশের এই মহীয়সী সন্তানকে কুর্নিশ জানিয়ে তাঁর নামে একটি রেলস্টেশন তৈরি করেছে ভারতীয় রেলওয়ে,

অভয়নগরে তাঁর একসময়ের শরণার্থী শিবিরের কাছেই বর্ধমান কর্ড লাইনে রয়েছে বেলানগর স্টেশন৷